গরিবের শিক্ষক
কাজী আশিক রহমান, মাগুরা
১৯৭০ সালে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতপাড়া গ্রামে জন্ম শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাসের (৫১)। তাঁর বাবা রামপদ বিশ্বাস ছিলেন পেশায় কৃষক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাস পেশায় স্কুলশিক্ষক। তাঁর আরও দুই ভাই শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছেন। বর্তমানে মাগুরার শালিখা উপজেলার শালিখা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
১৯৮৬ সালে বাঘারপাড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাস। ১৯৮৯ সালে বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে সম্মান পাস করেন তিনি। এসএসসি পাসের পরই থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হন শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাস। যে কারণে একসময় পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হতে বসে তাঁর। ১৯৯৮ সালে এসে যখন তাঁর থাইরয়েড রোগ ধরা পড়ে তখন বেশ দেরি হয়ে যায়। ওই সময় প্রায় এক বছর ভারতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও দুই পায়ে শক্তি কমে যায়। তখন থেকে শারীরিক ওই প্রতিবন্ধকতা নিয়েই চলছেন তিনি। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। অসুস্থ থাকার সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারেননি। এরই মধ্যে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাস। এরপর ২০০৪ সালের দিকে যশোর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে বিএড ও এমএড শেষ করেন তিনি।
শ্রীবাস চন্দ্রের শিক্ষকতা পেশার শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। এই সময়ে কয়েকজন বন্ধু ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় শরুশুনা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন তিনি। সেখানে প্রথমে সহকারী শিক্ষক এবং ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আর ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শালিখা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ওই শিক্ষকসহ কয়েকজনের উদ্যোগে শুরু হওয়া শরুশুনা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অল্প সময়ের ব্যবধানে উপজেলার মধ্যে একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী পেশায় গৃহিণী। এই দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। খাদের একজন দশম ও অন্যজন প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শরুশুনা ও আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকায় গরিবের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত শ্রীবাস চন্দ্র। বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক হওয়ার কারণে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেকে তাঁর কাছে আসেন প্রাইভেট পড়তে। যেসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কখনো অর্থ চেয়ে নেননি এই শিক্ষক। আরও একটা কারণে তিনি জনপ্রিয়। সেটা হচ্ছে, তিনি তাঁর সব শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ দেখিয়েছেন।