‘একজন ভালো শিক্ষক শুধু জ্ঞান বিতরণ করেন না, বরং মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণাও দেন। অথচ দেশে বর্তমানে শিক্ষকেরা অবমূল্যায়ন ও অবহেলার শিকার। শিক্ষকদের সম্মান জানানোর এই উদ্যোগ নতুন প্রজন্মকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করবে এবং সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা আরও সুদৃঢ় করবে। কারণ, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, শিক্ষকেরাই হচ্ছেন মানুষ তৈরির প্রকৃত আলোকবর্তিকা। আর প্রথম আলো সব সময় নতুন কিছু শেখায়, শিক্ষকদের সম্মান জানানোর জন্য প্রথম আলোর এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ উপলক্ষে কুমিল্লায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন উপস্থিত বিশিষ্টজনেররা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা কেন্দ্রের মিলনায়তনে কুমিল্লা অঞ্চলের সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে কুমিল্লার শিক্ষক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক, লেখক, সংগঠকসহ নানা শ্রেণি-পেশার সুধীজন আলোচনায় অংশ নেন। ২০১৯ সাল থেকে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়। এ বছর পঞ্চমবারের মতো এই সম্মাননা দেওয়া হবে আগামী অক্টোবর মাসে।
প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামসুল ইসলাম, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল বাশার ভূঁঞা, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, কুমিল্লার বিশিষ্ট হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হাসনাত আনোয়ার উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নুরুর রহমান খান, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তারিকুল ইসলাম চৌধুরী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি গোস্বামী, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায়, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মো. কবির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) কাজী আপন তিবরানী, কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল হাফিজ, অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম, অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হায়দার মজুমদার, বিশিষ্ট নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন, বাপা কুমিল্লার কুমিল্লার সহসভাপতি আলী আকবর (মাসুম), সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান, কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘লাল-সবুজ উন্নয়ন সংঘ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাওসার আলম প্রমুখ।

সুধী সমাবেশ বক্তব্য দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী। মঞ্চে আছেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামসুল ইসলাম, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। আজ সকালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা কেন্দ্রের মিলনায়তনে
আরও উপস্থিত ছিলেন সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক প্রকৌশলী মো. শাহ জাহান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন, অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানসহ বিশিষ্টজনেরা।
সুধী সমাবেশে ‘আখতার স্যার’ ও ‘মজুমদার স্যার’ শিরোনামে দুটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানানো ভিডিও চিত্র দেখে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় সুধী সমাবেশে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের সম্মান জানান অতিথিরা। অনুষ্ঠানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন কুমিল্লা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুসভার সদস্যরা। অনুষ্ঠানের দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন কুমিল্লা বন্ধুসভার সদস্য আরাত্রিকা ঘোষ (রূপকথা)।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমি যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, আমি যে একজন শিক্ষক সেটা আমি ভুলি না। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, শিক্ষকেরা হচ্ছেন আলোকবর্তিকা। যাঁদের মধ্যে সেই আলো নেই, তাঁদের শিক্ষকতা না করাই ভালো। শিক্ষার্থীদের আলোকবর্তিকা হচ্ছেন শিক্ষক, কাজেই আমাদের সেই আলোকবর্তিকা হতে হবে। কে আমাকে কী বলল, সেটা তোয়াক্কা করার দরকার নাই। আমি শিক্ষক, আমি নিজের কাছে দায়বদ্ধ—এটা মনে রাখতে হবে। আমরা শিক্ষকেরা সঠিক থাকলে, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উন্নতি করবেই। আমার আলোতে অন্যরা আলোকিত হবে, এটাই শিক্ষকতা। একজন প্রিয় শিক্ষক তাঁর কর্ম, আদর্শ ও ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে গভীর ছাপ রাখেন। এই সম্মাননা সেই সব শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুযোগ।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকেরা যেভাবে অবহেলিত হচ্ছেন, এর জন্য আমি মনে করি শিক্ষকেরাও কিছুটা দায়ী। কারণ, শিক্ষকেরা সময় মতো ক্লাসে যাবেন, পড়াবেন এটাই হচ্ছে নিয়ম। শিক্ষক যে মানুষ গড়ার কারিগর এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শিক্ষকেরা সঠিক আদর্শে শিক্ষকতা করলেই তাঁরা তাঁদের হারানো গৌরব ফিরে পাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, আইপিডিসি শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে প্রজ্ঞা নামক একটি লোন নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণে বাড়ি নির্মাণ কিংবা গাড়ি কেনার লোন দিচ্ছেন তাঁরা। আইপিডিসি সব সময়ই চায় শিক্ষকদের পাশে থাকতে।

আয়োজকেরা জানান, শিক্ষকদের সম্মান জানাতে আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসি ও প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে পঞ্চমবারের মতো শুরু হয়েছে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫ ’। আগ্রহী ব্যক্তিরা অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মনোনয়ন করতে পারবেন। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এই দুই ক্যাটাগরি থেকে মোট সাতজন শিক্ষককে ‘প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ দেওয়া হবে। এই সম্মাননার জন্য মনোনয়নযোগ্য শিক্ষক হতে হলে তাঁর বয়স কমপক্ষে ৪০ বছর হতে হবে। কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত—উভয় অবস্থাতেই মনোনয়নযোগ্য। মনোনয়নদাতা ও শিক্ষক উভয়কেই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনজন শিক্ষককে মনোনয়ন দিতে পারবেন। এ ছাড়া, এই মহান পেশার মানুষদের স্বপ্ন যেন শুধু অন্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, তাই জীবন বদলের কারিগর সব শিক্ষকদের স্বপ্নপূরণে আইপিডিসি নিয়ে এসেছে বিশেষ লোন-‘প্রজ্ঞা’।