মোছা. শাহানাজ পারভীন
প্রধান শিক্ষক
পৌর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঝিনাইদহ
সকালে বিদ্যালয়ে ঢুকে নিজ চেয়ারে বসার আগেই ঘুরতে শুরু করলেন প্রধান শিক্ষক শাহানাজ পারভীন। বিদ্যালয়ের পরিবেশসহ খুঁটিনাটি সব বিষয় দেখছেন। ছাদবাগানের গাছগুলোয় পানি দেওয়া হয়েছে কি না, ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে কি না, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, এগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন তিনি। একফাঁকে দেখে এলেন শিক্ষক-কর্মচারীর উপস্থিতিও। পরে নিজ চেয়ারে বসে সবাইকে দিনের কর্মসূচির দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
ঝিনাইদহ পৌর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোছা. শাহানাজ পারভীন বিদ্যালয়টিকে ভালোবেসে কাজ করে চলেছেন। তাঁর এই কাজ দেখে অন্য শিক্ষকেরাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাঁরাও বিদ্যালয়টিকে পাঠদানের উপযোগী করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ৫৪৮ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।
শাহানাজ পারভীন ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম ও মৃত শাহারা বানুর মেয়ে। তিনি পোড়াহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারি কেশব চন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ২০০৯ সালে দরিবিন্নী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা পেশায় যোগদান করেন। এরপর ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ঝিনাইদহ পৌর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি ২০২৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।
শাহানাজ পারভীন বলেন, তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন না। তিনি শিক্ষার্থীদের বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তাদের পাশে থেকে জীবন গড়ার কাজে সহযোগিতা করেন। এ কাজে তাঁকে সব সময় সহযোগিতা করেন প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকেরা। মাঝেমধ্যে অভিভাবকদের সহযোগিতা নেন, তাঁরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, একজন আদর্শ প্রধান শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি একটি বিদ্যালয়। যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মন ও চরিত্র গঠন হয়। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক শাহানাজ পারভীন শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য একজন পথপ্রদর্শক। তিনি সবার আগে বিদ্যালয়ে আসেন, আবার সবার শেষে বাড়ি যান। ক্লাস রুটিন, পাঠদান, পাঠদানের কৌশল নিজে তদারকি করেন। অন্য সব শিক্ষকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান পাঠান জানায়, প্রধান শিক্ষক শাহানাজ পারভীন তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশেন। তাঁর ওপর ভরসা করে যেকোনো সমস্যা নিয়ে তারা ছুটে যায়, সমাধান করে দেন সঙ্গে সঙ্গে। ক্লাসে অমনোযোগী ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি নিয়মিত পরামর্শ দেন। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই শিক্ষার্থীকে কী করলে ভালো হবে, সেটা করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষক মাহামুদা মিতা জানান, বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না, তা তিনি খুঁজে বের করেন। কখনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন, আবার কখনো টিউশন ফি কমিয়ে দিয়ে। অনেক কাজ তিনি ব্যক্তিগত অর্থে করেন, যা তিনি কাউকে বুঝতে দেন না। সহযোগিতা নেওয়া ওই শিক্ষার্থী যেন বন্ধুদের সামনে ছোট না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে তিনি কাজ করে যান। তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানে শুধু পড়ালেখার ওপর জোর দেন না, পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাহিত্য আসর, ছবি আঁকা, আবৃত্তি করা, বিজ্ঞানচর্চা করা ও নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বিদ্যালয়ে সততা স্টোর সঠিকভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। যেন এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সততা শিখতে পারে।
শাহানাজ পারভীন বলেন, আইপিডিসি–প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননায় তাঁর নাম এসেছে শুনে তিনি খুবই খুশি। তিনি মনে করেন, এটা তাঁর জীবনে একটি বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি তাঁকে আরও বেশি দায়িত্বশীল করবে।
আজাদ রহমান, ঝিনাইদহ