বাংলাদেশে শিক্ষার মানোন্নয়নে অনেক শিক্ষানীতি, শিক্ষা কমিশন হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র এখনো শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দিতে পারেনি। শিক্ষকদের মর্যাদা না দিলে জাতি এগোতে পারে না। বাংলাদেশ এখনো শিক্ষাবান্ধব কোনো সরকার পায়নি। তাঁরা সবাই একটা শিক্ষাবান্ধব সরকারের অপেক্ষায় আছেন, যে সরকার শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেবে।
যশোরে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা এ কথাগুলো বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে শহরের সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান’ শীর্ষক দেশাত্মবোধক গানটি গেয়ে শোনান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি দীপঙ্কর দাস। সুধী সমাবেশে যশোরের শিক্ষক, সাহিত্যিক, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নেন।
সুধী সমাবেশে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বেগম রোকেয়া পদকজয়ী উন্নয়নকর্মী ও জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মুর্তজা, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি শ্রাবণী সুর, সুরধনী সংগীত নিকেতনের সভাপতি হারুন অর রশিদ, মধুসূদন তারাপ্রসন্ন (এমএসটিপি) বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ খাইরুল আনাম, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, ডাক্তার আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপাল কলেজের অধ্যক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরিন শিরিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন যশোর বন্ধুসভার সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে ‘আখতার স্যার’ ও ‘মজুমদার স্যার’ শিরোনামে দুটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানানো ভিডিও চিত্র দেখে উপস্থিত অতিথিরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপর দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানান অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো শিক্ষাবান্ধব কোনো সরকার পায়নি। আমাদের পরিবারে তিনজন শিক্ষক। কিন্তু সমাজে এবং রাষ্ট্রে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি।’
কবি ও লেখক কাজী মাজেদ নেওয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক গণ্ডি পার করেছি ৪০ বছর আগে। শৈশবের যে শিক্ষকদের মুখ চোখের সামনে সামনে ভেসে উঠছে। তিনি ছিলেন লাইব্রেরিয়ান। শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তিনি আমাদের ক্লাস নিতেন। তিনি আমাদের বড় বড় লেখকের গল্প শোনাতেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। বড় হওয়ার পরে আমরা তাঁর সেই শিক্ষার গুরুত্ব বুঝেছি।’
আইপিডিসির ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষকদের কারণে আজ আমি এখানে কথা বলতে পারছি। শিক্ষকেরা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আবেগের একটা বড় জায়গা।’ তিনি জানান, এই মহান পেশার মানুষদের স্বপ্ন যেন শুধু অন্যদের মাঝেই সীমাবদ্ধ না থাকে, তাই জীবন বদলের কারিগর সব শিক্ষকদের স্বপ্নপূরণে আইপিডিসি নিয়ে এসেছে বিশেষ লোন- ‘প্রজ্ঞা’।
২০১৯ সাল থেকে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়। এ বছর পঞ্চমবারের মতো এ সম্মাননা দেওয়া হবে আগামী অক্টোবর মাসে। আয়োজকেরা জানান, আগ্রহী ব্যক্তিরা অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মনোনয়ন করতে পারবেন। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এই দুই ক্যাটাগরি থেকে মোট সাতজন শিক্ষককে ‘প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ দেওয়া হবে। এই সম্মাননার জন্য মনোনয়নযোগ্য শিক্ষক হতে হলে তাঁর বয়স কমপক্ষে ৪০ বছর হতে হবে। কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত—উভয় অবস্থাতেই মনোনয়নযোগ্য। মনোনয়নদাতা ও শিক্ষক উভয়কেই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনজন শিক্ষককে মনোনয়ন দিতে পারবেন।