মাহফুজা খাতুন
শিক্ষক
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
(১ জানুয়ারি ১৯৮০—১৪ আগস্ট ২০২৫)
মাহফুজা খাতুন ছিলেন এক অনন্য শিক্ষক। তিনি শিক্ষকতাকে কখনোই একটি পেশা হিসেবে দেখেননি, বরং এটি ছিল তাঁর জীবনের ব্রত, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশ। তিনি ছিলেন এমন একজন শিক্ষক, যাঁর প্রতিটি পাঠ ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য এক আশ্রয় ও আশ্বাস।
ঢাকার বাউনিয়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা মাহফুজা খাতুনের। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অধ্যবসায়ী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। ১৯৯৪ সালে বালুরঘাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৮ সালে বিএএফ শাহীন কলেজ (কুর্মিটোলা) থেকে এইচএসসি এবং ২০০১ ও ২০০৩ সালে যথাক্রমে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে। পরে ২০০৬ সালে আইডিয়াল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
২০০৬ সালেই মাহফুজা খাতুন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন। শুরু থেকেই তিনি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যেভাবে যত্নশীল মনোভাব ও গভীর মমতা দেখিয়ে গেছেন, তাতে তিনি অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিলেন শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাভাজন আর সহকর্মীদের প্রিয়জন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডি ছাড়িয়ে, ব্যক্তিজীবনেও মাহফুজা খাতুন ছিলেন এক নিখুঁত মানবিক রূপ—আদর্শ স্ত্রী, স্নেহময়ী মা আর ভালোবাসায় ভরপুর একটি পারিবারের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর স্বামী মৃত ওমর আলী ও একমাত্র কন্যা আয়শা সিদ্দিকা ওশিন ছিলেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় ও অনুপ্রেরণা।
ভাইবোনদের মধ্যে মাহফুজা খাতুন ছিলেন তৃতীয়। তাঁর ভাইবোনেরা হলেন মুর্শিদা খাতুন, লুৎফুর নাহার, খাদিজা খাতুন ও মো. এ বি সিদ্দিক।
২০২৫ সালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় এই নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের অকালপ্রয়াণ শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থীদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর শিক্ষা, অবদান ও মমত্ববোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’-এ মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।
আমরা তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা জানাই।